,

নিখোঁজ ভ্যানচালক ছেলের সন্ধানে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মা

ফরিদপুর প্রতিনিধিঃপ্রায় এক যুগ ধরে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় নিজ ঘরের বিছানায় ছটফট করছেন দিনমজুর স্বামী মো. মান্নান মোল্যা। স্বামী রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে পাঁচ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন স্ত্রী ছালেহা বেগম। এমন অবস্থায় ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন সন্তান মো. শাহাদাত মোল্যা (২৫)। ভ্যান চালিয়েই তিন বোনের বিয়ে দিয়েছে। ৮ বছর আগে ছিনতাইকারীরা শাহাদাতকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে তার সেই অটোভ্যানটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এতে নিজের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে শাহাদাত। একপর্যায়ে হারিয়ে যায় সে। প্রায় দেড় বছর আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী সন্তান ভ্যানচালক শাহাদাত। এরপর আর বাড়ি ফিরে আসেনি।

এর পর থেকে সন্তানের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মা ছালেমা বেগম। অসুস্থ স্বামীকে ঘরে রেখে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তিনি। তবে ছেলের সন্ধান না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

শুক্রবার (৩১ মে) সকালে ছালেহা বেগমকে তার ছেলের ছবি আর একটি নিখোঁজ জিডির কপি ব্যাগে করে নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা সদরে। এ সময় ছেলে নিখোঁজসহ তার পরিবারের এসব তথ্য জানিয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। ছালেমা বেগম সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী গ্রামের অসুস্থ দিনমজুর মান্নান মোল্যার স্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘মাঠে আমাগো এক কাঠা জমিও নেই। অনেক বছর ধরে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে শুয়ে রয়েছে। সে কোনো কাজ-কাম করবার পারে না। আমার তিন মাইয়া ও দুই ছেলে। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতে আমাদের কোনো খবর রাখে না। ছোট ছেলে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতো। সে তিন মাইয়াকে বিয়ে দিয়েছে। গত ৮ বছর আগে আমার ছেলেডারে মাইরা তার ভ্যানখান নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এরপর আমার ছেলেডা পাগলের মতো হয়ে যায়। গত ১৭ মাস আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত আমার ছেলেডার কোনো খোঁজ পাই নাই। থানায় জিডি করেছি, প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের জানাইছি। খেয়ে না খেয়ে সারাদেশের বিভিন্ন মাঝার ও শহরে গিয়ে তাকে খুঁজেছি। কোথাও তার দেখা পাই নাই। আমার ছেলেডারে আপনারা খুঁজে দেন। নইলে আমি বাঁচব না। ছেলেডার জন্যি মারা যাবো ‘

শুক্রবার দুপুরে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি অনেক আগের। তবে জিডি করেছে গত মাসে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ছেলেটাকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *